ইসলামের দৃষ্টিতে গোপন বিয়ে
স্বামী যদি ২য় বিয়ে করার পর ১ম স্ত্রীর নিকট তা গোপন রাখে বা স্বীকার না করে যে, সে ২য় বিয়ে করেছে তাহলে এটা কি তার জন্য বৈধ হবে?
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন: আহমদ বিন আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
أَعْلِنُوا هَذَا النِّكَاحَ
“তোমরা এই বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ করো।” (ইরওয়াউল গালিল, হা/১৯৯৩-শাইখ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।)
সুতরাং সাধারণ অবস্থায় বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা অবলম্বন করা উচিত নয়। বরং বিয়ের ব্যাপারটি সমাজের লোকজনকে জানানো এবং সবার সামনে প্রকাশ করা উচিৎ-যেন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়ে মানুষের মনে কোনো সন্দেহ সৃষ্টি না হয়। অন্যথায় সমাজে গোপন অভিসার ও অবৈধ সম্পর্ক সৃষ্টির পথ প্রশস্ত হতে পারে।
কিন্তু যদি বিয়ের শর্তাবলী ঠিক রেখে শরিয়ত সম্মত ভাবে বিয়ে সংঘটিত হয় অর্থাৎ কনের অভিভাবকের অনুমতি, মোহর নির্ধারণ ও দু জন সাক্ষীর উপস্থিতে ইজাব-কবুলের মাধ্যমে বিয়ে হওয়ার পর কোনো ব্যক্তি বিয়ের বিষয়টি সমাজের প্রকাশিত হওয়ার ফলে নিজের ক্ষয়-ক্ষতি ও জেল-জুলুমের আশঙ্কা করে তাহলে তার জন্য বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখা জায়েয রয়েছে।
যেমন, ২য় বিয়ের ক্ষেত্রে স্ত্রী, তার পরিবার বা প্রচলিত মানব রচিত আইনে হয়রানীর শিকার হওয়ার আশঙ্কা।
অবশ্য, অভিভাবকের সম্মতিক্রমে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে হলে সেটাকে গোপন বিয়ে বলা যায় না। বরং তা হাদিসের “তোমরা বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ করো” এ নির্দেশ বাস্তবায়িত হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকলে সমাজ ও এলাকাবাসীর নিকট বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ করা নি:সন্দেহে উত্তম।
অনুরূপভাবে ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে স্বামীর জন্য স্ত্রী বা তার পরিবারের নিকট ২য় বিয়ের বিষয়ে সরাসরি মিথ্যা না বলে তাওরিয়া করা (দ্ব্যর্থবোধক কথা বলা) শরিয়ত সম্মত। অর্থাৎ এমন ভাষায় কথা বলবে, যেটা সরাসরি মিথ্যা হবে না কিন্তু শ্রোতা সত্য মনে করবে।
ইসলামী শরিয়তে সমস্যা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কার ক্ষেত্রে সরাসরি মিথ্যা না বলে একটু ঘুরিয়ে পরোক্ষ ভাষায় কথা বলে শ্রোতার নিকট মূল বিষয়টিকে আড়াল করার বৈধতা রয়েছে। এটাকে তাওরিয়া বলা হয়।
আল্লাহু আলাম।