একটা হাদিস শুনলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রয়োজন ছাড়া পানি পথে ভ্রমণ করতে নিষেধ করেছেন। আমার প্রশ্ন হল, পর্যটন ও আল্লাহর সৃষ্টি দেখার উদ্দেশ্যে সেন্টমার্টিন যাওয়াও কি এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্গত হবে?
সফর, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ইত্যাদি যে কোনও বৈধ উদ্দেশ্যে সমুদ্র ভ্রমণ বৈধ। কেননা ইসলামে দুনিয়াবি সব কিছু বৈধ যতক্ষণ না সে ব্যাপারে কুরআন-হাদিসে নিষেধাজ্ঞা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়।
মহান আল্লাহ কুরআনের বহু স্থানে সমুদ্র ভ্রমণের কথা বলেছেন। যেমন: সূরা বাকারা/১৬৪, সূরা ইউনুস/২২, সূরা ইসরা/৬৬ ইত্যাদি।
قال الجصاص رحمه الله في “أحكام القرآن” (1/150) : ” باب إباحة ركوب البحر: وفي قوله تعالى : (والفلك التي تجري في البحر بما ينفع الناس) دلالة على إباحة ركوب البحر غازيا وتاجرا ومبتغيا لسائر المنافع ; إذ لم يخص ضربا من المنافع دون غيره . وقال تعالى : (هو الذي يسيركم في البر والبحر) ، وقال : (ربكم الذي يزجي لكم الفلك في البحر لتبتغوا من فضله) ، وقوله : (ولتبتغوا من فضله) قد انتظم التجارة وغيرها ، كقوله تعالى : (فإذا قضيت الصلاة فانتشروا في الأرض وابتغوا من فضل الله) ، وقال تعالى : (ليس عليكم جناح أن تبتغوا فضلا من ربكم) وقد روي عن جماعة من الصحابة إباحة التجارة في البحر ، وقد كان عمر بن الخطاب منع الغزو في البحر إشفاقا على المسلمين ” انتهى .
অবশ্য বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সমুদ্র ভ্রমন নিষেধ হওয়া প্রসঙ্গে একটা হাদিস পাওয়া যায় কিন্তু তা সহিহ নয়।
হাদিসটি হল:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رضي الله عنهما قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : (لَا يَرْكَبُ الْبَحْرَ إِلَّا حَاجٌّ أَوْ مُعْتَمِرٌ أَوْ غَازٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ، فَإِنَّ تَحْتَ الْبَحْرِ نَارًا ، وَتَحْتَ النَّارِ بَحْرًا)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হজ্জ ও উমরা কারী বা আল্লাহর পথে যুদ্ধ কারী ব্যতিরেকে কেউ যেন সমুদ্রে সফর না করে। কেননা সাগরের নিচে আগুন আছে। আর আগুনের নিচে সাগর আছে।” (আবু দাউদ, ৩৪৮৩)
শাইখ আলবানি রহ. বলেন,
اتفق الأئمة على تضعيفه
“হাদিসের ইমামগণ সকলেই এ হাদিসটি জঈফ হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।”
[ইরওয়াউল গালীল ৪/১৬৯]
তবে সমুদ্র যখন খুব উত্তাল হয় তখন তাতে সফর করা নিষেধ। যুহাইর রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ بَاتَ فَوْقَ بَيْتٍ لَيْسَ لَهُ إِجَّارٌ فَوَقَعَ فَمَاتَ ؛ فَبَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ ، وَمَنْ رَكِبَ الْبَحْرَ عِنْدَ ارْتِجَاجِهِ فَمَاتَ ؛ فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ
‘‘যে ব্যক্তি চারদিক ঘেরা নেই এমন ছাদে রাত্রি যাপন করা অবস্থায় নিচে পড়ে মারা গেলো কারোর উপর তার কোন দায়-দায়িত্ব থাকবে না। তেমনিভাবে যে ব্যক্তি উত্তাল সাগরে ভ্রমণ করে মারা গেলো কারোর উপর তারও কোন দায়-দায়িত্ব থাকবে না’’।
[আহমদ ৫/২৭১ সিলসিলাতুল-আহাদীসিস-সাহীহাহ্, হাদিস ৮২৮]
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, ইবনে আব্দুল বার উদ্ধৃত করেছেন যে,
أنه يحرم ركوبه عند ارتجاجه اتفاقا
“সাগর উত্তাল হলে সর্বসম্মতিক্রমে তাতে সফর করা হারাম।” (ফাতহুল বারী)
[islamqa থেকে মূল তথ্যগুলো সংগৃহীত]
শাওকানী রহ. বলেন,
والحديث يدل على عدم جواز ركوب البحر في أوقات اضطرابه
“উক্ত হাদিস প্রমাণ করে যে, সাগর যখন উত্তাল হবে তখন তাতে সফর করা বৈধ নয়।” (নাইলুল আওতার ৪/৩৪৩)
মোটকথা, শরিয়তের দৃষ্টিতে সার্বিক নিরাপত্তা ও ইসলামের বিধি-বিধান ঠিক রেখে সাগরে পর্যটন করা নাজায়েজ নয়। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সফরের বিধিবিধানগুলো অনুসরণ করা, সালাতে যত্নশীল থাকা, আল্লাহ ভীতি অন্তরে জাগ্রত রাখা অপরিহার্য। আল্লাহ অসন্তুষ্ট হোন এমন কোনও হারাম ও নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না। পাশাপাশি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জেনে বুঝে প্রচণ্ড ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ উত্তাল সমুদ্রে ভ্রমণ করা জায়েয নয়। কেননা তা নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর।
আল্লাহু আলাম।