ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মিছিল
মুসলিমরা একে তো সংখ্যায় কম, তারউপর নির্যাতিত। মক্কায় যারা সাহসী হিশেবে পরিচিত, তাদের বেশিরভাগই মুশরিক। ইসলাম গ্রহণ করে প্রকাশ্যে বের হবার সাহস এবং ঝুঁকি কোনোটাই কেউ নিতে চাচ্ছেন না।
হঠাৎ করেই সবকিছু বদলে গেলো। মক্কার অন্যতম বীর হামজা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলাম গ্রহণ করলেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের তিনদিন পর ইসলাম গ্রহণ করেন মক্কার আরেক বীর উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু); যার মাধ্যমে ইসলাম শক্তিশালী করার জন্য নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর কাছে দু’আ করেন।
উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলাম গ্রহণ করার পর খুব দ্রুত সবকিছুর পরিবর্তন হতে লাগে। এককথায়, উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলাম গ্রহণ ছিলো ইসলামের ইতিহাসে এক প্যারাডাইম শিফট।
দারুল আরকামে লুকিয়ে লুকিয়ে যেখানে সভা করা হতো, উমরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলাম গ্রহণের পর সেই ট্রেন্ড বদলে যায়।
উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নবিজীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গিয়ে বললেন,
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! বাঁচি বা মরি, আমরা কি হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত নই?”
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দিলেন, “ কেনো নয়? সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা বাঁচো বা মারা যাও, নিশ্চয়ই তোমরা হক্বের উপর রয়েছো।”
এবার উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সেই প্রস্তাবটি দেন, ইসলামের ইতিহাসে যেরকম প্রস্তাব ইতোপূর্বে আর কেউ দেয়নি। উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন,
“তাহলে আমরা কেনো পালিয়ে বেড়াচ্ছি?
সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, নিশ্চয়ই আমরা বাইরে বের হবো।”
মুসলিমরা দুই সারিতে মিছিল নিয়ে বের হয়, সাথে নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এক সারিতে হামজা (রাদিয়াল্লাহু আনহু), আরেক সারিতে উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। ইসলামের দুই বীর।
মুসলিমরা মিছিল নিয়ে ছুটছেন আর চারিদিকে ধূলো উড়ছে। মিছিল নিয়ে প্রবেশ করা হলো মসজিদুল হারামে। কুরাইশরা মুসলমানদের এমন স্পর্ধা দেখবে, সেটা ভাবতেই পারেনি। মুসলিমদের মিছিল দেখে তারা ভড়কে যায়! তারা এতোটা কষ্ট পায় যে, ইতোপূর্বে এমন কষ্ট তারা কখনো পায়নি।
ঠিক যেইদিন উমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলামের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মিছিল নিয়ে বের হোন, সেদিন নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ‘আল-ফারুক’ উপাধি দেন।
[তারীখে ওমর ইবনুল খাত্তাব, ইবনুল জাওযী, পৃষ্ঠা ৬,৭]
এদিকে ১৪০০ বছর পর বাংলাদেশে বসে একজন কবি একটি কবিতা লিখেন। মুসলিমদের মিছিলের ইতিহাস নিয়ে তিনি লিখেন ‘আমাদের মিছিল’ কবিতা। আল মাহমুদের সেই কবিতার প্রথম কয়েকটি লাইন এমন-
“আমাদের এ মিছিল নিকট অতীত থেকে অনন্ত কালের দিকে
আমরা বদর থেকে ওহুদ হয়ে এখানে,
শত সংঘাতের মধ্যে এ কাফেলায় এসে দাঁড়িয়েছি।
কে প্রশ্ন করে আমরা কোথায় যাবো?
আমরা তো বলেছি আমাদের যাত্রা অনন্ত কালের।”