ইফতার কি আযান হলে করতে হয়? সূর্য ডুবলো নাকি ডুবলো না, তার জন্য আমরা অপেক্ষা করি না। আমরা অপেক্ষা করি আযানের জন্য। কারণ আমাদের ধারণা, আযান হলে ইফতার খেতে হয়। অথচ আযানের সাথে ইফতারের কোন সম্পর্কই নেই।
রাসুল (ﷺ) বলেছেন, সূর্য যখনই অস্ত যাবে, সায়েম (সিয়াম পালনকারী) তখনই ইফতার করবে।”
[বুখারী ২৯৫৪, মিশকাত ১৯৮৫]
সময় হওয়ার সাথে সাথে শীঘ্র ইফতার করা নবুঅতের একটি আদর্শ। মহানবী (ﷺ ) বলেন,
‘‘তিনটি কাজ নবুয়তের আদর্শের অন্তর্ভুক্ত; জলদি ইফতার করা, দেরী করে (শেষ সময়ে) সেহরী খাওয়া এবং নামাযে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখা।’’
[ত্বাবারানী, মু’জাম, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/১০৫, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৩০৩৮নং]
অথচ, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা সূর্যাস্তের ৩/৪ মিনিট পরে সতর্কতামূলক ইফতার করে থাকি, যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আদেশের স্পষ্ট বিপরীত।
আদম (আ) এর সময় থেকে শুরু করে সব যুগের সব নবী-রাসুলরাই ইফতার করেছেন বিনা আযানে। আসলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাড়া কোনো নবী-রাসূলের যুগে তো আযানই ছিলনা।
আযানের সূচনা হয়েছে সিয়াম (রোজা) শুরুর অজস্র বছর পরে।
.
বাস্তবতা হচ্ছে , রাসূলুল্লাহ (ﷺ ) রাসূল হওয়ারও প্রায় ১০/১২ বছর পরে সালাতের আদেশ পেয়েছেন। এরও কিছুদিন পরে তিনি মদিনায় হিজরত করেছেন। তারও কিছুদিন পরে শুরু হয়েছে আযান। উদ্দেশ্য ছিল একটাই – সবাইকে একসাথে সালাতে আহবান করা, ইফতার খাওয়া নয়।
আযানের সূচনা প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেনঃ “মুসলমানরা মদিনায় আসার পর একত্রিত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে সালাত পড়ে নিত। এ জন্য কেউ আযান দিত না।”
একদিন তারা ব্যাপারটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করল। তাদের একজন বলল, নাসারাদের নাকূসের অনুরূপ একটা নাকূস (শঙ্খ) ব্যবহার কর। তাদের অপরজন বলল, ইহুদীদের শিঙ্গার অনুরূপ একটি শিঙ্গা ব্যবহার কর। উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা সালাতের জন্য আহবান করতে একটি লোক পাঠাওনা কেন?
রাসূল (ﷺ) বললেন,
“হে বিলাল! উঠো এবং সালাতের জন্য ডাক দাও (আযান দাও)।”
[গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ ৪/ কিতাবুস স্বলাত হাদিস নম্বরঃ ৭২৩, ইফা]
বাড়ির পাশের ২/৩ টা মসজিদে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন যে, রমজান মাসে মুয়াজ্জিনরা আগে ইফতার মুখে নেন, তারপরে আযান দেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মুয়াজ্জিনরা কার আযান শুনে মুখে ইফতার নেন?
আসলে আযান শুনে না, তাঁরা মুখে ইফতার নেন সূর্য ডোবার সাথে-সাথে। মুয়াজ্জিনরা যদি আযান শেষ করে ইফতার করতে যান, তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। প্রায় ২, ৩ বা ৪ মিনিটের ব্যবধান হয়ে যাবে
রাসুল (ﷺ ) বলেছেন,
“তত দিন মানুষ কল্যানের মধ্যে থাকবে যত দিন মানুষ দ্রুত ইফতার করবে।”
[বুখারী ১৯৫৭; মুসলিম ২৬০৮; আহমাদ ২২৮২৮]
সুতরাং কল্যানের মধ্যে থাকতে চাইলে অবশ্যই দ্রুত ইফতার করতে হবে।
ইন্টারনেটে Sunset Today লিখলেই পেয়ে যাবেন আজকের সূর্যাস্তের সময়। অথবা আজকের সংবাদপত্রেও দেখতে পারেন সূর্যাস্তের সময়।
রাসূল (ﷺ) বলেন, “দ্বীন চিরদিন বিজয়ী থাকবে, যতদিন লোকেরা ইফতার তাড়াতাড়ি করবে। কারন, ইহুদী-খ্রীস্টান
রা ইফতার দেরীতে করে”
[আবু দাউদ- ২৩৫৩, মিশকাত- ১৮৯৮]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেও সারাজীবন সূর্য ডোবার সাথে-সাথে দ্রুত ইফতার করেছেন। তারপর আযান হয়েছে, তারপরে সালাতে গিয়েছেন। পক্ষান্তরে পূর্ব সতর্কতামূলক ভাবে মুয়াজ্জিনদের দেরী করে আযান দেওয়া বিদআত।
[মু’জামুল বিদা’ ২৬৮পৃঃ]
অতএব ইফতারের জন্য দেখার বিষয় হল সূর্যাস্ত; আযান নয়। সুতরাং রোযাদার যদি দেখে যে, সূর্য ডুবে গেছে কিন্তু মুয়াজ্জিন এখনো আযান দেয়নি, তাহলেও তার জন্য ইফতার করা বৈধ।
[আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৩৯]
.
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সূর্য ডোবার সাথে-সাথে ইফতার করে কল্যাণের মাঝে থাকার তৌফিক দান করেন।