আসরের ওয়াক্তে যদি পিরিয়ড ভালো হয় তাহলে কি যোহর আদায় করতে হবে?
আসরের ওয়াক্তে যদি পিরিয়ড ভালো হয় তাহলে কি আসর এবং যোহর উভয় ওয়াক্তের সালাতই পড়তে হবে নাকি কেবল আসর সালাত পড়াই যথেষ্ট?
কোনও ঋতুমতী নারীর যদি আসর সালাতের সময় হওয়ার পর ঋতুস্রাব বন্ধ হয় তাহলে তার জন্য গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ। তারপর তার জন্য আসর সালাতে আদায়ের পাশাপাশি যোহরের সালাতও কাজা করা আবশ্যক কি না সে বিষয়ে আলেমদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়।
জুমহুর বা অধিকাংশ আলেমের মতে, তার জন্য যোহর ও আসর উভয় ওয়াক্তের সালাত আদায় করা আবশ্যক। কারণ ওজর গ্রস্ত ব্যক্তি (যেমন: অসুস্থ ও মুসাফির) এর ক্ষেত্রে যোহর এবং আসর সালাত একসাথে জমা করার বিধান রয়েছে।
ইবনুল কুদামা তার আল মুগনী গ্রন্থে বলেন,
وروي هذا القول عن عبد الرحمن بن عوف وابن عباس وطاوس ومجاهد والنخعي والزهري وربيعة ومالك والليث والشافعي وإسحاق وأبي ثور . قال الإمام أحمد : عامة التابعين يقولون بهذا القول إلا الحسن وحده قال: لا تجب إلا الصلاة التي طهرت في وقتها وحدها، وهو قول الثوري وأصحاب الرأي
এই মতটি বর্ণিত হয়েছে, সাহাবি আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা., আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এবং তাউস, মুজাহিদ, নাখঈ, যুহরী, রবিয়াহ, মালিক, লাইস, শাফেয়ী, ইসহাক, আবু সাউর প্রমুখ ফকিহদের থেকে। ইমাম আহমদ বলেন, একমাত্র হাসান বসরী ছাড়া অধিকাংশ তাবেঈর মত এটিই। তিনি (হাসান বসরী) বলেছেন যে, (হায়েজ-নেফাস গ্রস্ত নারী) যে ওয়াক্তে পবিত্র হয়েছে একমাত্র তা ছাড়া অন্য কোনও সালাত তার জন্য ওয়াজিব নয়। এটি সুফিয়ান সাওরী এবং আসহাবুর রায় (যুক্তি পন্থী) দের অভিমত।”
আধুনিক যুগে আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.ও এই মত গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন,
إذا طهرت المرأة من الحيض أو النفاس في وقت العصر وجب عليها أن تصلي الظهر والعصر جميعًا في أصح قولي العلماء؛ لأن وقتهما واحد في حق المعذور؛ كالمريض، والمسافر، وهي معذورة بسبب تأخر طهرها، وهكذا إذا طهرت وقت العشاء وجب عليها أن تصلي المغرب والعشاء جميعًا كما سبق، وقد أفتى جماعة من الصحابة بذلك
“কোনও মহিলা যদি আসরের সময় হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্রতা অর্জন করে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, যোহর ও আসর উভয়টি পড়া। এটাই আলেমদের দুটি মতের মধ্যে অধিক বিশুদ্ধ। কারণ ওজর গ্রস্ত ব্যক্তি (যেমন: রোগী ও মুসাফির) এর জন্য যোহর ও আসর সালাতের সময় একটি। আর এই মহিলাও ওজর গ্রস্ত তার পবিত্রতা বিলম্বিত হওয়ার কারণে।
অনুরূপভাবে সে যদি ইশার সময় পবিত্র হয় তাহলে তার জন্য মাগরিব এবং ইশা উভয় সালাত আদায় করা আবশ্যক-যেমনটি আগে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মর্মে একদল সাহাবির ফতোয়া রয়েছে।”
পক্ষান্তরে কতিপয় আলেমের মতে, তার জন্য যোহর সালাত কাজা করা আবশ্যক নয়। বরং কেবল আসর সালাত আদায় করবে। কারণ যোহরের সময় তার উপর সালাত ফরজ ছিল না। সুতরাং তা কাজা করাও আবশ্যক নয়। সুফিয়ান সাওরী, হাসান বসরি এবং আসহাবুর রায় এই মত পোষণ করেছেন। আধুনিক যুগে আল্লামা শাইখ উসামীন রাহ. একই মত গ্রহণ করেছেন।
[ফতোয়ার মূল উৎস: islamweb]
যাহোক, দ্বিমত পূর্ণ মাসআলার ক্ষেত্রে আমাদের কর্তব্য, অধিক সতর্কতা মূলক এবং অধিক দলিল ও যুক্তি সম্মত মতটি গ্রহণ করা। সুতরাং সালাতের মত
তাওহিদের পরে ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের ক্ষেত্রে ১ম অভিমতটি (অর্থাৎ যোহর ও আসর উভয় সালাত একসাথে আদায় করা) গ্রহণ করা দীন ও ঈমানের স্বার্থে অধিক নিরাপদ-তাতে কোনও সন্দেহ নাই। আল্লাহু আলাম।