আমরা চেষ্টা করেছি বাকি আল্লাহ ভরসা- এ কথার মধ্যে শিরক আছে কি
এ কথা সঠিক এতে কোনও শিরক নেই। কারণ ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে, আল্লাহর নামে আগে কাজ করতে হবে, চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে হবে অতঃপর সফলতার জন্য মহান আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। চেষ্টা-পরিশ্রম না করে কেবল আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থাকা ইসলামের শিক্ষা নয়।
আনাস রা. হতে বর্ণিত,
قال رجلٌ يا رسولَ اللهِ أعقِلُها وأتوكَّلُ أو أُطلقُها وأتوكَّلُ قال اعقِلها وتوكَّلْ
“এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রসুল, আমি কি উট বেঁধে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করব, নাকি তা ছেড়ে রেখে? তিনি বললেন, “উট বাঁধ, অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।”1
উমর ইবনুল খাত্তাব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
لو أنَّكم تَوَكَّلُونَ علَى اللهِ تعالَى حَقَّ تَوَكُلِهِ ، لَرَزَقَكُمْ كمَا يَرْزُقُ الطيرَ ، تغدُو خِماصًا ، وتروحُ بِطانًا
“তোমরা যদি সত্যিকার ভাবেই আল্লাহর উপর ভরসা কর তবে তিনি পাখিদের মতই তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। ভোরবেলা পাখিরা খালি পেটে বেরিয়ে যায় এবং সন্ধ্যা বেলা ভরা পেটে ফিরে আসে।”2
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, পাখিরা আল্লাহর উপর ভরসা করে বাসায় বসে থাকে না। তারা খুব ভোরে তাদের বাসা ছেড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রিজিকের সন্ধানে যায়। সেখানে ওঁত পেতে থাকা শিকারির জালে ধরা পড়ার কিংবা সাপ-বিচ্ছু ও হিংস্র পশুর আক্রমণে জীবননাশের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রিজিক অনুসন্ধান করে। ফলে আল্লাহ তাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। এবং তারা সন্ধ্যায় পেট পুরে খাবার খেয়ে বাসায় ফিরেতে পারে।
তাহলে বুঝা গেল, ঘরে বসে খাবারের অপেক্ষা করার নাম তাওয়াক্কুল বা ভরসা নয়। বরং হালাল উপার্জনের জন্য দৌড়-ঝাঁপ ও চেষ্টা-পরিশ্রম করা, বিভিন্ন ঝুঁকি মাথায় নিতে কাজ করা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উভয়টির প্রয়োজন আছে। তাহলেই আল্লাহ সাহায্য করবেন।
সুতরাং “আমরা চেষ্টা করেছি, বাকি আল্লাহ ভরসা।” এ কথা বলায় কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।
তবে মনে রাখতে হবে যে, আমরা চেষ্টা-পরিশ্রম বা কোন কাজ করতে পারবো না যদি আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমতা না দেন। আমরা আমাদের নিজস্ব ক্ষমতা বলে কোন কিছু করতে সক্ষম নই। এটাই “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”-এর অর্থ।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন। তা হলো:
بسم الله توكلت على الله لا حول ولا قوة إلا بالله
(বিসমিল্লা-হি, তাওয়াক্কালতু ‘আলাল্লা-হি, লা- হাওলা ওয়ালা- কুওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহ।)
অর্থ: “আল্লাহর নামে (বের হলাম)। আমি আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম। কোনও অবলম্বন নেই এবং কোনও শক্তি নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া।”3
তাই আমাদেরকে আল্লাহর নামে কাজ শুরু করতে হবে, তার সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে, অতঃপর তার উপর ভরসা করতে হবে।
নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর নিয়ন্ত্রক ও পরিচালক। আর আমরা অতিশয় দুর্বল দুর্বল এবং তার করুণার মুখাপেক্ষী। তার দেওয়া শক্তি-সামর্থ্য ছাড়া ছাড়া আমাদের নিজস্ব কোনও শক্তি, সামর্থ্য বা যোগ্যতা নেই।
আল্লাহু আলাম।
“আমার যতটুকু করার তা আমি করেছি- বাকিটা আল্লাহর উপর।” এ কথা বলার হুকুম কী?
الحمد لله، رب العالمين والصلاة السلام على رسول الله، وبعد:
فمن يقول هذا العبارة مراده أني فعلت السبب الذي أقدر عليه في الأمر الذي أريد تحقيقه، وأما حصول المقصود، وتحقيق النتائج فذلك إلى الله، وهذا المعنى حق، فإن العبد لا يملك تحقيق مقاصده، وبلوغ آماله إلا بتوفيق الله وتيسيره، فمعنى هذه العبارة يرجع إلى ما جاء في الحديث “اعقلها وتوكل”. أخرجه الترمذي (2517)، وابن حبان (731). وهذا هو الذي يليق بالمسلم أن يفعل السبب المشروع ويعتمد في حصول المطلوب على ربه، فيجتهد في فعل الأسباب المشروعة، ويستعين بربه في حصول مطلوبه كما قال صلى الله عليه وسلم “احرص على ما ينفعك، واستعن بالله ولا تعجِز”. صحيح مسلم (2664).
ولكن ينبغي أن يقول المتكلم بهذه العبارة (والباقي إلى الله)، بدل (على الله)، والله أعلم
“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রসুলের উপর। অত:পর-
যে ব্যক্তি এই বাক্যটি বলে তার কথার মানে হল যে, আমি যে বিষয়টি অর্জন করতে চাই তার জন্য আমি সাধ্যানুযায়ী উপায় অবলম্বন করেছি (অর্থাৎ আমার যা করণীয় আমি তা করেছি)। কিন্তু লক্ষ্য হাসিল বা ফলাফল অর্জনের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করছি।
আর এ অর্থটি সত্য। কারণ আল্লাহর রহমত ও তৌফিক ছাড়া বান্দা তার লক্ষ্য অর্জন এবং প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না।
সুতরাং উক্ত বাক্যটির অর্থ সেটাই, যা এ হাদিসে এসেছে:
اعقِلْها وتوكَّلْ
“আগে উট বাঁধো, তারপর আল্লাহর উপর ভরসা কর।” (অর্থাৎ উটকে না বেঁধে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থেকো না। অন্যথায় উট পালিয়ে যাবে)। এটি তিরমিজি (২৫১৭) এবং ইবনে হিব্বান (৭৩১) বর্ণনা করেছেন।
একজন মুসলিমের জন্য কর্তব্য হলো, সে যা চায় তা অর্জনের জন্য তার প্রতিপালকের উপর ভরসা করবে। ফলে সে বৈধ উপায় অবলম্বন করার পাশাপাশি তার প্রতিপালকের সাহায্য প্রার্থনা করবে। যেন সে তার প্রত্যাশা অনুযায়ী তা অর্জন করতে পারে। যেমন: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
احْرِصْ علَى ما يَنْفَعُكَ، وَاسْتَعِنْ باللَّهِ وَلَا تَعْجِزْ
“যা তোমার জন্য কল্যাণকর তা গুরুত্ব সহকারে করো এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো। অক্ষম হয়ো না।”4
তবে যে এমন কথা বলবে, তার “বাকিটা আল্লাহর উপর” না বলে উচিৎ, “বাকিটা আল্লাহর নিকটে।”
আল্লাহু আলাম-আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।”
- সহিহ তিরমিজি, হা/২৫১৭, শাইখ আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন ↩︎
- তিরমিজি, সহিহুল জামে, হা/৫২৫৪ ↩︎
- সুনানুত তিরমিজি, ৫/৪৯০, সহীহুল জামিয়িস সাগীর ২/৮৫৯, হাদিসটি হাসান। ↩︎
- সহীহ মুসলিম, ২৬৬৪ ↩︎