অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলে যাওয়া মুসলিম বোনটা আমার শুদ্ধ ভাবে আলিফটাও উচ্চারণ করতে পারে না। ইংরেজির ব্যকরণ উদ্ধার করা ভাইটি আমার সুরা ফাতিহা টাও সহিহ ভাবে তিলাওয়াত করতে পারেনা। তাওহীদের বুনিয়াদ কালেমা উচ্চারণেও ভুল করি আমরা। সওয়াব অর্জন তো হচ্ছেই না। গুনাহ হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ। অথচ আমাদের কোন মাথা ব্যথাই নেই।
অর্থ জানা তো দূর কি বাত, তাজউইদ শুদ্ধ করার ইচ্ছাই জাগে না আমাদের মাঝে।।
ইংরেজি একটা শব্দ উচ্চারণে ভুল করেন আপনি, আপনাকে নিয়ে ট্রল শুরু হবে। কিন্তু কালামুল্লাহ পাঠে অজস্র ভুল। শুধরে নিতে বলবে না কেও। নিজের সালাত ঠিক হচ্ছে কি না জানা নেই, অজু ঠিক আছে কি না জানিনা, ইনকামে বা কাজের মাঝে হারাম ঢুকে যাচ্ছে কিনা তার হিসেব নেই, আমাদের হিসেব শুধু কিভাবে জনপ্রিয় হওয়া যায়, কিভাবে পরিচিতি লাভ করা যায়, কিভাবে দুনিয়া টাকে উপভোগ করা যায় এসব নিয়ে?
আখেরাত কে উপেক্ষা করে দুনিয়া কে এত গুরুত্ব কেন দিচ্ছি আমরা?
আমাদের দ্বীন কে জানার আগ্রহ কি মনে জাগ্রত হয়না?
জেনারেল পড়ুয়া আমরা যখন মাদ্রাসার ক্লাস গুলো করি প্রতিটি ক্লাসেই এত শত শত প্রশ্ন আসে যে উস্তাজ রা উত্তর দিয়ে শেষ করতে পারেন না৷ এক পানির আহকাম নিয়ে কত শত প্রশ্ন উস্তাজ এর কাছে এসেছে আমি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখেছি৷ এত প্রশ্নের ফাঁকে আমার প্রশ্নের কথা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। এই যে এই অজ্ঞতা, কেন? জানিনা বলেই তো। অথচ আমরা দ্বীনের ইলম কে কোন গুরুত্বই দেই না।
সুন্দর ক্যারিয়ার গঠনে কি করা উচিৎ, ক্যারিয়ার বাঁচাতে কি করা উচিৎ তা জানা আছে খুব ভালভাবেই। ফলে আমরা ক্যারিয়ার হারাচ্ছিনা। কিন্তু সুন্দর আখেরাত গঠনের উপায় জানা নেই আমাদের, ঈমান ধরে রাখা বা ঈমান বাঁচানোর উপায় জানা নেই। ফলে হরহামেশাই ঈমান হারাচ্ছি আমরা।
বিখ্যাত কোন লেখক বা কবি, বড় কোন ইতিহাসবিদ, শীর্ষ কোন নেতা, সো কল্ড জনপ্রিয় কোন খেলোয়াড় বা অভিনেতা, অথবা বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তির জীবনে আদ্যোপান্ত জানা থাকলেও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামানব, উম্মতের দরদী, আলোর দিশারি, সবচেয়ে বেশি ভালবাসার হক্বদার, আল্লাহর রাসুল সাঃ এর জীবনের কিছুই জানি না আমরা। ফলে অনেকের কাছেই তিনি গল্পে শোনা অবাস্তব এক চরিত্রে পরিণত হচ্ছেন। (আল্লাহুম্মাগফিরলি)
একটা ভাল বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাবার জন্য, একটা সরকারী চাকরী পাবার জন্য, বেকারত্ব থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সকল কিছু রাত দিন এক করে পড়ে ফেলতে পারি আমরা। নিজের সর্বচ্চ টুকু দিয়ে জানতে পারি সব। কিন্তু জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য, জান্নাত পাবার জন্য আমার দ্বীন ইসলাম কে জানতে পারিনা। জানার সময় পাইনা। ফলে জীবনের মধ্যে ইসলাম শুধু “মাঝে মাঝে নামাজ” আর “রমজান এর রোজা’র মাঝেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ভার্সিটির শিক্ষকের কাছে ভাইভা/প্র্যাক্টিক্যালে ভাল মার্ক্স পাবার জন্য, অফিসের বসের কাছে ” বেস্ট এমপ্লয়ি” হবার জন্য, তাদের প্রিয় হবার জন্য আমরা নিজের সবটুকু স্মার্টনেস তাদের সামনে প্রদর্শন করি। তাদের কথায় সর্বোচ্চ দৌড়াদৌড়ি ছুটোছুটি করতে পারি। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শাফায়াত পাবার জন্য, তৃষ্ণায় কলিজা ফাটার সময় তার (সাঃ) এর হাতে হাউজে কাওসার এর পানি পান করার জন্য, পুলসিরাত সহজে পার হবার জন্য,আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হবার জন্য তার হুকুম গুলো পরিপূর্ণ রুপে পালন করতে পারিনাম সিরিয়াসনেসের সাথে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারিনা।
এক ওয়াক্ত হয় ও দুই ওয়াক্ত ছুটে। একদিন হয় তো সাতদিন ছুটে যায়।
দৃঢ়তার সাথে পর্দা করতে পারিনা, নিজেকে উন্মুক্ত করে দিয়েই যেন যত সুখ। তাকওয়ার সাথে হালাল হারাম বেঁছে চলতে পারি না। এই বেলা কুরআন তিলাওয়াত করি আরেক বেলা গান শুনি।
আরেকবেলা মুভি, তার পরের বেলা কোন বেপর্দা নারী কে দেখি দুচোখ ভরে। রাত হলেই গায়রে মাহরাম কোন নারীর সাথে প্রয়োজন ছাড়াই চলছে বেদম আড্ডা, কখনো বা নিজের না হলেও অন্য কোন বেপর্দা নায়িকা/নারীর ছবি শেয়ার দিচ্ছি নিজের ওয়ালে।(বেপর্দা নারীর ছবি আপলোডিং এ ভাইয়েরাও পিছিয়ে নেই। নিজের বৌ এর ছবি জিন্দেগীতেও আপলোড না করা ভাইটিকেও অন্য মহিলার ছবি ঠিকই আপলোড করতে দেখা যায়। এতে যে গুনাহ হয় তা কি তারা বুঝে না?)
চিন্তাভাবনা ছাড়াই বেদম কোন ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক এডেড ভিডিও শেয়ার দিয়ে দিচ্ছি। নিজেও গুনাহ করছি অন্যের ও গুনাহের কারণ হচ্ছি। মিডিয়া হচ্ছি। নিজের গুনাহ কি জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়?
কারো ব্যপারে কুধারনা করছি, কারো গীবত। ইয়ারকির ছলে কাওকে গালি দিচ্ছি। নিশ্চিন্তে করে যাচ্ছি সব। যেন জীবন এসবের জন্যই, কোন কিছুর-ই যেন হিসেব নেয়া হবে না।
আল্লাহু আকবর। ইসলাম এমন এক দ্বীন যা আপনাকে কিভাবে খেতে হয় তা থেকে শুরু করে কিভাবে ঘুমাতে হয়, কিভাবে গোসল করতে হয়, ইভেন কিভাবে টয়লেট ব্যবহার করতে হয় এটাও শেখায়। যার সবকিছুতেই কল্যান। পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ওয়াল্লাহি ইসলাম এর বাইরে কোন কল্যাণ নেই। ওয়াল্লাহি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনের বাইরে কোন আদর্শ নেই।।
‘আসহাবে রাসুলের জীবন কথা’ বইতে জনাব মুহাম্মদ আব্দুল মা’বুদ বড় বাস্তবিক-ই বলেছিলেন——
“আমরা যারা পরকালকে উপেক্ষা করে দুনিয়াতে সামান্য কিছু অর্জন করে নিজেকে হিরো ভাবি, আল্লাহর শপথ — আমরা কখনোই সফলকাম নই। সফলকাম তো তারাই —যারা আভিজাত্যের পোশাক ছেড়ে দারিদ্রের পোশাক পরেছিলেন। “
“সফলকাম তো তারাই —-যারা একফোঁটা জলের বিনিময়ে পুরো সমুদ্র কিনে নিয়েছিলেন।
লেখা: Shaila Parvin Sathi