আত্মজা
কিভাবে সবাই উপলব্ধি করেছিল যে রাসুল (ﷺ) মৃত্যুবরণ করেছেন?
আয়েশা (রা:) চিৎকার করে উঠলেন। রাসুল (ﷺ) তাঁর কোলে মাথা রেখেই মারা গেছেন। যখন জিব্রাইল (আ:) রাসুলের (ﷺ) কাছে আসলেন, তিনি আরো একবার প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠলেন এবং আঙ্গুল উঁচু করে বললেন, “الرفيق الاعلى بالرفيق الاعلى – যিনি সর্বোচ্চ আমি তাঁর সান্নিধ্য বেছে নিলাম।” এই ছিল মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ কথা। এরপর তাঁর হাত পড়ে গেল।
আয়েশা (রা:) চিৎকার করে উঠলেন। এ চিৎকার যিনি প্রথম শুনেছিলেন তিনি হলেন ফাতিমা (রা:), কারণ তিনি পাশের ঘরেই বসে ছিলেন। চিৎকার শোনার পর তিনি প্রথম যা বললেন তা হল,
ياأبَتاه، مِن رَبِّه ما أَدْناه، واأبَتاه، إلى جِبرائيلَ أَنْعاه، واأبَتاه، جَنَّةُ الفِردَوْسِ مَأْواه
অর্থাৎ ياأبَتاه، مِن رَبِّه ما أَدْناه – হে আমার প্রিয় বাবা, আপনি আপনার পালনকর্তার কতই না নিকটবর্তী। واأبَتاه، إلى جِبرائيلَ أَنْعاه – জিব্রাইলের (আ:) কাছে আমরাও আপনার মৃত্যু ঘোষণা করছি। واأبَتاه، جَنَّةُ الفِردَوْسِ مَأْواه – হে আমার প্রিয় বাবা, আপনি এখন জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা। জান্নাতের সর্বোচ্চ উদ্যান এখন আপনার আবাসস্থল। রাসুলের (ﷺ) মৃত্যুতে এই ছিল ফাতিমার (রা:) শেষ কথা।
আলী (রা:) স্তব্ধ হয়ে গেলেন, কিছুদিন তিনি কোনো কথাই বলতে পারলেন না। একেক জনের একেক রকম প্রতিক্রিয়া হয়েছিল রাসুলের (ﷺ) মৃত্যুতে। আলীর (রা:) চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর বাকপটুতা। কিন্তু সেদিন তিনি একটি কথাও উচ্চারণ করতে পারলেন না।
আনাস (রা:) বলেন, যখন আমরা রাসুলকে (ﷺ) সমাধিস্থ করছিলাম, ফাতিমা (রা:) আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একজন সাহাবাকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন,
“কেমন করে আমার বাবার মুখে মাটি নিক্ষেপ করলেন?”
এ ছিল তাঁর মানবিকতা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ। “কেমন করে পারলেন তাঁকে কবর দিতে?
তাঁর মুখে মাটি দিতে?
কিভাবে সক্ষম হলেন?”
আনাস (রা:) বলেন, আমি তাঁকে বললাম “والله انكقرنا قلوبنا – আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমাদের হৃদয়কে অস্বীকার করে তা করেছি, অনুভুতিকে অসাড় করে এ কাজ করতে সক্ষম হয়েছি। রাসুলকে (ﷺ) কবরে নামিয়ে তাঁর মুখে মাটি নিক্ষেপ করেছি।”
আনাস (রা:) বলেন, ফাতিমা (রা:) আমার দিকে তাকালেন এবং কেঁদে উঠলেন। এরপর তিনি চলে গেলেন। পিতার মৃত্যু তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না, তিনি বেদনায় ভারাক্রান্ত হলেন। এরপর তিনি আর বেঁচে থাকতে চাইলেন না।
এ প্রসঙ্গে অনেক কথাই বলা যায়। যারা একে অন্যকে প্রচণ্ড ভালোবেসে, বিশেষ করে বয়স্ক যুগলের ক্ষেত্রে এরকমটা দেখা যায়। তারা একজনের মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে আরেক জনও মৃত্যুবরণ করেন। অনেক সময় এরকম ব্যতিক্রধর্মী কিছু সম্পর্ক দেখা যায়। আল্লাহ তা’য়ালাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো জানেন।
রাসুলের (ﷺ) মৃত্যুর ঠিক পরপরই ফাতিমা (রা:) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, কেন তিনি তাঁর বাবাকে এতটা ভালবাসতেন? রাসুল (ﷺ) কি ফাতিমাকে (রা:) ঐশ্বর্য ও সম্পদের প্রশ্রয় নিয়েছিলেন? ক্ষমতা ও অবস্থানের সুবিধা কি তাঁকে দিয়েছিলেন? এ ভালোবাসা তো আল্লাহ সব বাবা মার অন্তরেই দিয়েছেন। এখানে রাসুলের (ﷺ) ভূমিকা একজন বাবার। পিতা-মাতা হিসাবে একজন সন্তানকে যে ভালোবাসা আপনি দিতে পারেন, তা দুনিয়ার সবকিছুর চেয়েও বেশি মূল্যবান। আল্লাহর রাসুল হওয়া সত্বেও, এত দায়িত্বের মাঝেও যে ভালোবাসা তিনি তার কন্যাকে দিয়েছিলেন, তাই তাঁর বাবাকে এমনভাবে ভালবাসতে শিখিয়েছিল।
আলী (রা:) ও ফাতিমার (রা:) সুখের সংসার
পর্ব : ১১
মূল: ড. ওমর সুলাইমান