আজকের ইজরাইল যার নামে

আগুনও যার পরশে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো তিনি সেই সম্মানিত নবী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর নাতি। অর্থাৎ তিনি নবী ইসহাক আ. এর পূত্র। আমরা তাকে ইয়াকুব আ. নামে জানলেও তার আরেক নাম হচ্ছে ‘ইস্রাইল’ যার অর্থ হলো, আল্লাহর দাস। তার বংশধররাই বণি ইসরাইল নামে পরিচিত। আজকের ই.জরাইল রাষ্ট্রের নামও তার নামেই রাখা হয়েছে। যদিও তারা তাদের দাম্ভিকতায় ভুলে গেছে যে, ই.জরাইল মানে হচ্ছে ‘আল্লাহর দাস’।

ইসহাক আ. এর দুই পূত্র ছিলেন। তবে তাদের মাঝে শুধু ইয়াকুব আ. নবী হিশেবে মনোনীত হয়েছিলেন। ইয়াকুব আ. এর জীবনি পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায়, একবার তিনি ইরাকের হারানে তার মামার বাড়ি যাওয়ার জন্য রওয়ানা হোন। পথিমধ্যে ক্লান্ত হয়ে পড়লে খানিক বিশ্রাম নেয়ার জন্য একটা পাথরের উপর মাথা রাখতেই চোখে ঘুম চলে আসে। গভীর ঘুমে তলিয়ে যান ইয়াকুব আ.। সেই ঘুমের মধ্যে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেন তিনি।

তিনি স্বপ্নে দেখেন- একদল ফেরেশতা আকাশে উঠানামা করছে। আর এর মাঝে আল্লাহ তাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘আমি তোমার উপর বরকত নাযিল করবো, তোমার সন্তান-সন্তুতি বৃদ্ধি করে দিবো, তোমাকে এবং তোমার পরে তোমার উত্তরসূরিদের এই ভূমির মালিক করে দিবো।’ এই ঘটনার স্থান ছিলো বর্তমান ফিলিস্তিন। তাই এর জের ধরে ইহুদিরা একে তাদের জন্য আল্লাহর নির্ধারিত ভূমি বললেও প্রকৃত পক্ষে ইয়াকুব আ. এর অসিয়ত ও তার সন্তানদের ওয়াদা অনুযায়ী এই ভূমির মালিক মুসলমানরাই।

এই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে ইয়াকুব আ. এর ঘুম ভেঙে গেলো। তিনি খুশিমনে মানত করলেন, এই স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করবেন এবং রুজির এক দশমাংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করবেন। তিনি এই জায়গার নাম দিলেন ‘আল্লাহর ঘর’। জায়গাটা মনে রাখার জন্য ইয়াকুব আ. পাথরের উপর একটা চিহ্ন এঁকে দিলেন। আর এই জায়গাটাই হচ্ছে আজকের ‘বায়তুল মুক্বাদ্দাস’। যদিও এর বহু পূর্বেই এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিলো। কিন্তু সম্ভবত তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় আল্লাহ আবার ইয়াকুব আ. কে স্বপ্নযোগে চিনিয়ে দিলেন। এর প্রায় ১০০০ বছর পর নবী সুলায়মান আ. এই মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন।

হারানে গিয়ে ইয়াকুব আ. বিবাহ করেন। সেখানে তিনি অনেকদিন ছিলেন। তিনি দুই বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে দশ সন্তান ও দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে দুই সন্তান- ইউসুফ ও বিনইয়ামিন। বিনয়ামিনের জন্মের পর দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যান। এই দুই সন্তানের মধ্যে ইউসুফ আ. পরবর্তীতে নবী হোন। হারান থেকে এক বর্ণনামতে প্রায় ২০ বছর পর ইয়াকুব আ. বর্তমান আল-খালিল এলাকায় তার পিতৃপুরুষের নিবাসে চলে আসেন। এখানে আসার পর তিনি তার মানতকৃত সেই মসজিদটি নির্মাণ করেন।

এরপর ঘটে যায় নানা ঘটনা। বিশেষ করে ইউসুফ আ. কে নিয়ে। ইউসুফ আ. মিশরের গভর্নর হলে বাবা ইয়াকুব আ. কে মিশরে ডেকে নেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। জানা যায় প্রায় ১৪৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে ইয়াকুব আ. তার সন্তানদের একটি অসিয়ত করে যান। যা আল্লাহ তায়ালা কুর’আনে বর্ণনা করেছেন।

ইয়াকুব আ. তার সন্তানদের একত্রে ডেকে নিলেন। তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহ তার দ্বীনকে মনোনীত করেছেন। অতএব তোমরা মুসলিম না হয়ে মরো না।’ এরপর তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার পরে তোমরা কার ইবাদত করবে?’ তখন সবাই এক বাক্যে জবাব দিলো, ‘আমরা আপনার উপাস্য এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাইল ও ইসহাক্বের উপাস্যের ইবাদত করবো- যিনি একক উপাস্য এবং আমরা সবাই তার প্রতি সমর্পিত।’

হযরত ইয়াকুব আ.

লিখেছেন

নাবিল হাসান

সিলেটে থাকি, পড়ালেখা সিলেটেই। পড়ছি কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। আর ভালোবাসি লিখালিখি করতে।
Writer and selector at জাগরণ - Jagoron
সসীমের পথ ছেড়ে ছুটি অসীমের পানে

All Posts

সিলেটে থাকি, পড়ালেখা সিলেটেই। পড়ছি কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। আর ভালোবাসি লিখালিখি করতে।
Writer and selector at জাগরণ – Jagoron
সসীমের পথ ছেড়ে ছুটি অসীমের পানে

Exit mobile version