আঁধারের প্রথম রাত

কখনো ভেবেছেন কি, মৃত্যুর পরে যখন আপনার আত্মা বেরিয়ে যাবে, আপনাকে রাখা হবে চিরস্থায়ী এক আঁধারের মাঝে তখন আপনার অবস্থা কি হতে পারে?
আমরা বিশ্বাস করি, ‘দারতাতুল কাবর’ তথা কবরের চাপ বলে একটি ঘটনা আমাদের প্রত্যেককে সহ্য করতে হবে। যেখানে কবর হতে থাকবে সংকীর্ণ; কীভাবে হবে আল্লাহু আ’লাম! তবে প্রত্যেক মুমিন তা বিশ্বাস করে কেননা এটি ঘটবেই। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট তা বর্ণনা করেছেন। কবর যখন সংকীর্ণ হতে থাকবে একজন মানুষ কিভাবে এক পরীক্ষার মুখে পতিত হবে!

ফেরেশতারা আসবেন, তারা প্রশ্ন করবেন, প্রত্যেক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হবে-
-তোমার রব কে?
-তোমার দ্বীন কি?
-তোমার নবী কে?
আমাদের জন্য নিশ্চয়ই সে মুহূর্তে এটি শোভনীয় নয় যে বললাম-
“আরে! আমি তো এর উত্তর রোজ সকালে আওড়াতাম।” না! এটি বলাই যথেষ্ট হবে না। আপনি যদি পার্থিব জীবনে সত্যের পথ অনুসরণ করে থাকেন কেবলমাত্র তখনি এ প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবেন, অন্যথায় না। যে মুমিন ব্যক্তি দুনিয়ায় মুসাফির হয়েছিলো, পরবর্তীতে তার থাকার জন্য সেই আঁধার ঘর সুখের স্থান হবে, সে দেখতে পারবে জান্নাতি সুধা, জান্নাতের সুশীতল বাতাস তাকে যেন স্পর্শ করে যাবে সুবহানাল্লাহ!

কিন্তু যে ব্যক্তি পার্থিব জীবনে তার অহমিকার চাদরে আচ্ছাদিত ছিলো, তার পুরো জীবন দশায় তার রবের দিকে প্রত্যাবর্তন করেনি তাকে যখন উক্ত প্রশ্ন করা হবে- সে কখনোই এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে না যদিও দুনিয়াবি জীবনে চলতে ফিরতে সেই ব্যক্তি এসব প্রশ্নের জবাব সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলো। তার কর্মকান্ড তাকে সেদিন এসব জবাব প্রদানে বাধা দিবে।

আমরা কুরআন পড়ি, কিংবা কুরআন তেলাওয়াত শুনি কিন্তু চিন্তা করিনা, তোতা পাখির মতো বলতে থাকাই আমাদের লক্ষ্য হয়ে যায়! আমরা ভাবি না, এর কাজ কি?
কিভাবে আমি সারাজীবন পার করছি আর কিভাবে সৃষ্টিকর্তা বলেছেন তা আমরা ভাবতে যাই না! হায়! কতই না বোকা আমরা; আল্লাহু আকবার

আমার এটা জানা প্রয়োজন কারণ আমার মৃত্যুর পরে কোনো শায়েখ আমার হয়ে বলবেন না, ‘ইয়া আল্লাহ! আমি তাকে কুরআনের অর্থ পড়তে নিষেধ করেছিলাম।’
আপনার কি মনে হয়?
আপনাকে আপনার রব চিন্তা করার মতো সুস্থ এক মস্তিষ্ক দিয়েছেন, কখনো ভেবেছেন কি সে কঠিন সাওয়াল-জবাবের দায়ভার কার?

আল্লাহর পরিকল্পনা বুঝতে চাইলে এখনি তার কালাম হাতে নিন। সুবহানাল্লাহ! নিশ্চয়ই এটি আপনাকে রাসূলের পথে ধাবিত করবে। কিন্তু যদি এ বইয়ের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক না থাকে কিভাবে আপনি আখিরাতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছেন?

প্রিয় ভাই বোনেরা! মৃত্যু আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। আমরা চাই আকাশচুম্বী অট্টালিকা, ছোট্ট একটি এপার্টমেন্ট কখনো তো এসবের জন্য আমরা ঋণ নিতেও চলে যাই! অথচ কত মানুষেরই এ অট্টালিকার আগেই আসল প্রাসাদের প্রয়োজন পরে কারণ তারা মৃত্যুবরণ করেন৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলে দিয়েছেন,
‘কে ঋণ দেবে যেন সেই ঋণ বহুগুণে তাকে ফেরত পাবে?’

সুতরাং, আপনার রবের জন্য সময়, শক্তি ব্যয় করুন। মৃত্যুর পরে কবরের একাকি ঘরে তাহলে আপনাকে দেয়া হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা। মুত্তাফাকুন আলাইহিতে এক বর্ণনায় আছে,
‘যে মানুষ মারা যাচ্ছে সে শুধু ফেরেশতাদের দেখতে পারবে, পুরোটা জুড়ে শুধু ফেরেশতারা থাকবেন।’

আল্লাহ আমাদের জন্য সে দিনটিকে সহজ করে দিন, আমীন।
আল্লাহর কাছে উত্তম কিছু চান। যারা পরকালে বিশ্বাস করেনি তারাও ইতোমধ্যে পরকালে বাস করছে, কি বোকা তারা! আমরা কোথায় যাচ্ছি? কবরের জন্য প্রস্তুত হোন, প্রস্তুত হোন সে দিনের জন্য যখন আপনার নিকটাত্মীয়রা আপনাকে সমাধিস্ত করে আসবে।

আমি সবসময় বলে থাকি, এমন এক দিন আসবে যখন ফোন বেজে চলবে, মেসেজ আসতে থাকবে, হোয়াটসঅ্যাপিং করবে মানুষ আপনার মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে। এই দিনটি আসছে, দিনটি অবশ্যই আসবে! যাদের সাথে সারাজীবন কাটিয়েছেন তারাই একদিন বলবে- ইন্না-লিল্লাহ!
সে কিভাবে মারা গেছে। মাঝেমধ্যে আমরা অবাক হই!

কিন্তু জানেন কি সবচেয়ে বেশি অবাক কখন হবেন?

যখন দেখবেন আপনি কোনোরূপ প্রস্তুতি গ্রহণ করার পূর্বেই চলে গেছেন, এটিই হবে আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা!

ভাবানুবাদ।
মূলঃ মুফতি ম্যাঙ্ক।

লিখেছেন

কারিশমা আনান

নারী আড়ালেই সুন্দর। যদি সে বইও প্রকাশ করে ফেলে তবুও আড়ালেই থাকুক।
জানানোর মতন, পরিচয় দেবার মতন কোনো পরিচয় নেই। আমি আল্লাহর এক সৃষ্টি, আমার নবী ﷺ এর উম্মতের একজন। এর বেশি পরিচয় নেই, দিতেও ইচ্ছুক না

লেখকের সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

নারী আড়ালেই সুন্দর। যদি সে বইও প্রকাশ করে ফেলে তবুও আড়ালেই থাকুক। জানানোর মতন, পরিচয় দেবার মতন কোনো পরিচয় নেই। আমি আল্লাহর এক সৃষ্টি, আমার নবী ﷺ এর উম্মতের একজন। এর বেশি পরিচয় নেই, দিতেও ইচ্ছুক না

Exit mobile version