অর্ধাঙ্গী

মাঝে মাঝে মনে হয় এ যেন টাকা খরচ করে বিয়ে করেছি, ঝগড়া করার মানুষ আনার জন্য! ব্যাচেলর জীবনটাই ভালো ছিলো। এটা ভাবতে ভাবতেই আরো একবার ফোন বাজলো, উফফফ। মালিহা, আমি জ্যামে আছি তো, বুঝার চেষ্টা করো। ওপাশ থেকে কড়া গলায় বলল, বিরিয়ানি রান্না করার মাংস রান্নার আগে আনবা নাকি রান্নার পরে কাঁচা মাংস কুচিকুচি করে কেটে বিরিয়ানিতে ছিটিয়ে দিবো, হমমম?

কথাটা শেষ করেই মালিহা ফোনটা কেটে দিলো। আমার কথা বলার কোন সুযোগই নেই। এদিকে আমার মাথার বাঁশ পরলো মনে হয়। হায় হায়, মাংশ কেনার কথাই তো ভুলে গেছি!

মারাত্মক একটা ভুল হয়ে গেলো। অফিস কলিগদের সাথে অযথা সময় নষ্ট করে বাজারে যেতে ভুলে গেছি আবার এদিকে আছি জ্যামে পরে। বাসায় আবার আসবে মেহমান। মালিহা আগেই বলে রেখেছিলো তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে। একা একা এতোগুলো কাজ রোজা রেখে করা আসলেই কষ্টকর। আজ আমার বাসায় থাকা খুবই দরকার ছিলো।

আমাদের রাসূল (স.) ঘরে থাকাকালিন আয়শা (রা.) কে কাজে প্রচুর সহযোগীতা করতেন। আর নামাজের সময় হলে বেরিয়ে যেতেন [বুখারী-৬৭৬]

আর আমি অফিস থেকে বাসায় গিয়েই চিৎপটাং হয়ে শুয়ে থাকি। আজ নিশ্চয়ই মালিহা আমার গায়ের মাংশ কেটে বিরিয়ানি রান্না করবে। অবশেষে বাস থেকে নামলাম। কিন্তু কোন রিক্সা ফাকা পাচ্ছি না। এক রিক্সার পিছনে তিনজন প্যাসেঞ্জারের প্রতিযোগীতা। এদিকে মুয়াজ্জিন আযান দিলো বলে। ঝামেলা যখন আসে সব একসাথে হামলা দেয়। অনেক কষ্টে একটা রিক্সা পেলাম। কিছু দূর যেতেই ব্যাটার চেইন গেলো ছিড়ে! এ যেন বিপদ ঘাড়ের উপর চেপে বসেছে। রিক্সাওয়ালার হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়েই দিলাম ভোঁদৌড়…. ।

দরোজার সামনে দাড়িয়ে দুই সেকেন্ডের জন্য একটু ভেবে নিলাম, মালিহাকে কীভাবে বুঝিয়ে শুনিয়ে এবারের মত পার পাওয়া যায়। এদিকে কলিং বেল চাপ দিতেই মুয়াজ্জিন আর দেড়ি করলো না, আল্লাহু আকবর, আল্লা….. । দরোজা খুলেই মালিহা হাত থেকে ব্যাগ নিতে নিতে বললো, তাড়াতাড়ি ফ্রেস হও। আযান দিয়ে দিছে। মাথা নিচু করে বেডরুমে চলে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তড়িৎগতিতে মালিহা দু’টো খেজুর আর শরবতের গ্লাস নিয়ে হাজির।

মাথা নিচু করেই শরবত খাচ্ছি আর ভাবছি, মিষ্টি শরবতটা শেষ হলেই গলাটিপে নিমফলের রস খাওয়াবে নিশ্চয়ই। মালিহা একটা গামজা নিয়ে হাজির। ব্যপার কি, শ্বাসরুদ্ধ করে মারবে নাকি!!

কিন্তু না, মালিহা শরিরের ঘাম মুছে দিচ্ছে আর বলছে গোসল করে নেও, গা থেকে তো হনুমানের গন্ধ আসতেছে। এতো ঘামাচ্ছো কেন?
কারো সাথে কুস্তি খেলে আসছো নাকি?

প্রতিটি দিন শেষেই দেখা যায় আমিই মালিহার কাছে সহযোগিতার ভিখারি। কিন্তু এই মানুষটার মন জয় করার মত আমার কোন পদক্ষেপ নেই। যতোটা সম্ভব নিজের ভুলগুলো ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত। এটা ভাবতে ভাবতেই মালিহা হাসিমুখে এক প্লেট খিচুড়ি নিয়ে হাজির। মাংস আনতে দেড়ি করেছি বলে ইলিশ মাছ দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেছে। ঘ্রাণটা অসাধারণ।
হমমম, রান্নাটা তো খুবই সুস্বাদু হয়েছে…..

নোট:
হজরত কাসেম (রহ.) বলেন, আমি একদা হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসুল (সা.) ঘরের মধ্যে কী কাজ করতেন?
উত্তরে তিনি বললেন, তিনি অন্যান্য মানুষের মতোই একজন ছিলেন, নিজের কাপড়ের উকুন পরিষ্কার করতেন, বকরির দুধ দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।
[মুসনাদে আহমদ : ২৬১৯৪]

তিনি স্বীয় কাপড় নিজেই সেলাই করতেন, নিজের জুতা নিজেই মেরামত করতেন এবং সাধারণ মানুষের মতোই ঘরের কাজকর্ম করতেন।
[মুসনাদে আহমদ : ২৪৯০৩]

সিরিজ-
রামাদান নিয়ে খুটিনাটি [পর্ব-১২]
পর্ব- “অর্ধাঙ্গী

Exit mobile version