“ভবিষ্যতে হয়তো আরো খারাপ অবস্থা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য!”
এরকম একটা আক্ষেপ অনেককেই করতে দেখা যায়। হয়তো সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক মন্দা কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ব্যক্তিগত লাভ-লোকসান হিসাব করে আমরা এই আক্ষেপ করি এবং ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করি।
আচ্ছা আপনার কি মনে হয় না যে এখনই আমরা যথেষ্ট খারাপ একটা সময় পার করছি? দিনকে দিন সমাজে অবক্ষয় নেমে আসছে। আমাদের সন্তানেরা মানুষ হওয়ার পথে শতশত বাঁধা।যিনা-ব্যাভিচার-সমকামিতার মতো গুণাহগুলো পৃথিবীর অন্য দেশের মতো আমাদের দেশেও যে তাদের শাখা বিস্তার করছে তা কি আমাদের মাথাব্যাথার কারণ না? ঘাড়ের উপর একের পর এক ঘূর্ণিঝড়,ভূমিকম্প,তাপদাহ,খরা,বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ একের পর এক মানবসৃষ্ট দুর্যোগ পালাক্রমে এসে বসছে তা কি আমাদের জন্য সতর্কতার কারণ হয় না? মুসলিম হিসেবে আমাদের মত প্রকাশ যে একটু একটু করে সংকুচিত হয়ে আসছে, ইসলামকে যে ধর্মের কোটরে আবদ্ধ করে কুরআনকে জাদুঘরে তুলে আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে প্রতি দিন মুসলিম উম্মাহকে যে পরাজিত করা হচ্ছে তা কি আমাদের জন্য যথেষ্ট খারাপ অবস্থা না?
নাকি এর থেকেও খারাপ অবস্থার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি যেমনটা হয়েছিলো আব্বাসী খিলাফতের সময় যখন মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঢুকে গিয়েছিলো মঙ্গোলরা, খিলাফতের পাশাপাশি উম্মাহর অস্তিত্বকেও সংকটে ফেলে দিয়েছিলো!
এই যে খারাপ অবস্থা কখনও কি ভেবে দেখেছেন এর পেছনে আমাদের হাত আছে কিনা?
প্রথমত আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছি, দ্বিতীয়ত এর ফলশ্রুতিতে আমাদের উপর আপতিত বিপদে সতর্ক হচ্ছি না এবং সর্বশেষ এর ফলস্বরূপ আমরা আমাদের ঈমান ও আমল নিয়ে অস্তিত্বের সংকটে পড়ছি, আমাদের কান্নামাখা আর্তনাদ ও দুআগুলো আটকে যাচ্ছে এবং দিনকে দিন পরাজয়ের গ্লানি বইতে হচ্ছে।
আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন,
“হে লোক সকল!
তোমরা তো অবশ্যই এই আয়াত তিলাওয়াত করে থাক:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের নিজেদেরই কর্তব্য তোমাদেরকে সংশোধন করা। যদি তোমরা সৎপথে থাক তাহলে যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা তোমাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না”
(সুরা: মাইদা -১০৫)।
অথচ রাসূলুল্লাহ সা. কে আমি বলতে শুনেছি-মানুষ যদি কোন অত্যাচারীকে অত্যাচারে লিপ্ত দেখেও তার দুহাত চেপে ধরে তাকে প্রতিহত না করে তাহলে আল্লাহ্ তা’আলা অতি শীঘ্রই তাদের সকলকে তাঁর ব্যাপক শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত করবেন।”
[জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২১৬৮]
অর্থাৎ এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা আমাদের দায়িত্ব শুধু আক্ষেপ প্রকাশ করলেই দায়মুক্তি হয় না। কমপক্ষে দুআ কবুলের জন্য তো আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে!
নবীজি সা বলেছেন,
“সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ!
নিশ্চয়ই তোমরা সৎকাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ্ তা’আলা শীঘ্রঈ তোমাদের উপর তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর নিকট দু’আ করলেও তিনি তোমাদের সেই দু’আ গ্রহন করবেন না।”
[জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২১৬৯]