সুদ কি?
আরবি রিবা শব্দ দ্বারা সুদকে বুঝানো হয়েছে।
রিবা অর্থ হচ্ছে বাড়তি, অতিরিক্ত ইত্যাদি।
মূলধন থেকে অতিরিক্ত কিছু গ্রহন করাকেই সুদ বলা হয়। সুদ সমাজের এক চরম পর্যায়ের ব্যাধি।
এজন্যই আল্লাহ তায়ালা সুদকে হারাম করেছেন। আর ব্যবসাকে হালাল করেছেন।
সুদ হারাম হওয়ার দলীলঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন
وَ اَحَلَّ اللّٰہُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا
আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন (সূরা বাকারা ২৭৫)
সুদ নেয়া বা দেয়া দুটাই হারাম এবং চরম পর্যায়ের ঘৃণিত কাজ।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের মধ্যে সুদ সম্পর্কে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوا الرِّبٰۤوا اَضۡعَافًا مُّضٰعَفَۃً ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আল ইমরান ১৩০)
হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবূ হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন
الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ
সুদের গুনাহর সত্তরটি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্তর হলো আপন মাকে বিবাহ (যেনা) করা। (ইবনে মাজা-২২৭৪)
রাসূল (সাঃ) থেকে এতবড় হুশিয়ারি পাওয়ায় পরেও আমরা নিজেদেরকে সুদ থেকে বিরত রাখতে পারছিনা।
সুদের শাস্তিঃ
সুদের পরিণাম বা শাস্তি কত ভয়াবহ হবে তা নিচের দুটি হাদিস পড়লেই অনুমান করা যায়।
১। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আজ রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, দু’ব্যক্তি আমার নিকট আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমিতে নিয়ে গেল। আমরা চলতে চলতে এক রক্তের নদীর কাছে পৌঁছলাম। নদীর মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং আরেক ব্যক্তি নদীর তীরে, তার সামনে পাথর পড়ে রয়েছে। নদীর মাঝখানে লোকটি যখন বের হয়ে আসতে চায় তখন তীরের লোকটি তার মুখে পাথর খন্ড নিক্ষেপ করে তাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে যতবার সে বেরিয়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে পাথর নিক্ষেপ করছে আর সে স্বস্থানে ফিরে যাচ্ছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ কে?
সে বলল, যাকে আপনি (রক্তের) নদীতে দেখেছেন, সে হল সুদখোর।
(সহীহ বুখারী- ১৯৫৬)
২।আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মিরাজের রাতে আমাকে একদল লোকের নিকট নিয়ে আসা হলো। তাদের পেট ছিল ঘরের মত বিশাল, তার মধ্যে সাপ ভর্তি ছিলো, যা বাইরে থেকে দেখা যায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এরা কারা? তিনি বলেনঃ এরা সুদখোর।
(ইবনে মাজা ২২৭৩)
একথা দুঃখ জনক হলেও সত্য যে সুদ নজমক এই সামাজিক ব্যাধি বর্তমানে মহামারী আকার ধারণ করেছে। সুদের এই ব্যাধি থেকে সমাজজে মুক্ত করতে হবে। যদি আমরা সুদমুক্ত পবিত্র রিজিক গ্রহন করি তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের রিজিকে বরকত দিবেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুদ মুক্ত জীবন গঠন করার তৌফিক দান করুক। (আমীন)